BD Travel Info
hm expo logo

খ্রিষ্টাব্দ। বঙ্গাব্দ। সময়ঃ

শিরোনাম

গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে মাগুরা

খুলনা বিভাগ মাগুরা জেলা

প্রকাশঃ 2024-04-22 16:17:27 |

শেয়ার করুনঃ Facebook | Twitter | Whatsapp | Linkedinদেখা হয়েছে 446 বার।


গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে মাগুরা

গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে মাগুরা


বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মাগুরার রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। দীর্ঘ ৯টি মাস পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের হত্যা, নির্যাতনের কালো অধ্যায় পেরিয়ে ১৯৭১-এর ৭ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় মাগুরা। আকাশে ওড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। মুক্তিযুদ্ধের সেই গৌরবময় কাহিনী সংক্ষেপে তুলে ধরা হলঃ

 

পাক বাহিনীর প্রবেশ: পাক বাহিনী ও মিলিশিয়ারা মাগুরায় আসে ৭১-এর মার্চের শেষদিকে। মাগুরায় প্রথম শহীদ হন শহরের এক পাগল। পাক বাহিনীকে দেখে সে জয় বাংলা বলে উঠলে হানাদাররা তাকে গুলি করে হত্যা করে। শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জগবন্ধু দত্তকে তার বাড়িতে গুলি করে মারে পাক বাহিনী। পাক বাহিনীর দোসর আলবদর আলসামস শহরের কালি মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করে ও মূর্তি ভাংচুর করে। তারা জেলার বিভিন্ন বাজার, বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

 

হানাদারদের ঘাঁটিঃ মাগুরা শহরের পিটিআই, সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, আনসার ক্যাম্প, ডাকবাংলাতে পাক বাহিনী ঘাটি স্থাপন করে। শহরের গোল্ডেন ফার্মেসী ভবন, রেনুকা ভবন, জগবন্ধু দত্তের বাড়ি, চৌধুরী বাড়ি দখল করে রাজাকার ও শান্তি কমিটি তাদের অফিস স্থাপন করে। এসব স্থানে তারা মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে ধরে এনে নির্যাতনের পর হত্যা করতো। পিটিআই এর পিছনে পাক বাহিনী বিমান নামার অস্থায়ী রানওয়ে নির্মাণ করেছিল।

 

মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটিঃ মাগুরা শহরে নোমানী ময়দানের আনসার ক্যাম্পাসের বিশাল পাকা টিনের ঘরে সংগ্রাম কমিটির অফিস খোলা হয়। এখানে বসেই অ্যাডভোকেট আছাদুজ্জামান অন্যান্য জেলা মহকুমার সাথে টেলিফোন যোগাযোগসহ মাগুরা অঞ্চলের প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং সংগ্রাম কমিটির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেন। এস.ডি.ও অফিসে স্থাপিত কন্ট্রোল রুম থেকে অ্যাড. নাসিরুল ইসলাম আবু মিয়া তার সহযোগী মাগুরা শহরের আবু জোহা পিকুল (ক্রীড়াবিদ ও নাট্যশিল্পী)কে সাথে নিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। এ সময় মাগুরার বিভিন্ন স্থানে ছুটিতে বাড়ী আসা ই.পি.আর, পুলিশ, সেনা এবং আনসার বাহিনীর সদস্যদের সমাবেত করা হয়। মাগুরা পুলিশ লাইনস্-এর আগ্নেয়াস্ত্র গোলাবারুদ তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মাগুরা নোমানী ময়দান, সরকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ মাঠ, পারনান্দুয়ালী শেখপাড়া আম বাগান প্রভৃতি স্থানে আগ্রহী ছাত্র জনতাকে প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হয়। মাগুরার বিভিন্ন স্কুল কলেজের বিজ্ঞানাগার থেকে কেমিক্যাল সংগ্রহ করে শহরের ক্ষুদিরাম সাহার আম বাগানের নির্জন স্থানে তৎকালীন ছাত্রনেতা আবু নাসের বাবলু এবং কামরুজ্জামান চাঁদ এর তত্বাবধানে হাতবোমা তৈরি হয়। এসব বিস্ফোরক মাগুরার চর্তুদিকের প্রতিরোধ ক্যাম্পে পৌছেঁ দেয়া হয়।

 

বধ্যভূমি ও গণকবরঃ মাগুরার ওয়াপদা ব্যারেজ, ক্যানেল, পিটিআইতে পাক বাহিনী ও রাজাকাররা শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। পিটিআইতে বহু মানুষকে হত্যা করে তারা মাটি চাপা দেয়। আড়পাড়ায় ডাক বাংলোতে পাক বাহিনী ঘাঁটি স্থাপন করেছিল। ফটকি নদী দিয়ে নৌকাযোগে যাওয়ার পথে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদের ধরে এনে হত্যার পর ডাক বাংলোর প্রাঙ্গণে একটি ইদারায় ফেলে দিত। ছয় ঘরিয়ায় ১৩ মুক্তিযোদ্ধার গণকবর, হাজরাহাটিতে ৭ মুক্তিযোদ্ধার এবং তালখড়িতে ৭ মুক্তিযোদ্ধার গণকবর রয়েছে।

পাক বাহিনীর নির্যাতনঃ পাক বাহিনী মাগুরায় যে বর্বর নির্যাতনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তার তুলনা পাওয়া ভার। হানাদাররা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা লুৎফুর নাহার হেলেনাকে ধরে এনে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। প্রগতিশীল এই নারীকে তারা জিপের পেছনে দড়ি দিয়ে বেঁধে সারা মাগুরা শহর টেনেহিঁচড়ে হত্যা করে। ২৬ নভেম্বর ভোরে কামান্না গ্রামে মাধব চন্দ্র কুণ্ডুর ঘরে ঘুমন্ত ২৭ মুক্তিযোদ্ধাকে পাক বাহিনী গুলি করে হত্যা করে। এদের সকলের বাড়ি মাগুরার হাজীপুর এবং তার পার্শ্ববর্তী গ্রামে। ছয় ঘরিয়ায় ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে এবং হাজরাহাটি নামক স্থানে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকাররা নির্মম নির্যাতনে হত্যা করে।

 

সম্মুখযুদ্ধঃ মাগুরায় পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর বেশ কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধ হয়। এগুলোর মধ্যে মহম্মদপুর উপজেলা সদরের যুদ্ধ, বিনোদপুর যুদ্ধ, জয়রামপুর যুদ্ধ প্রভৃতি যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। এসব যুদ্ধে আহম্মদ ও মোহম্মদ (দু’ভাই), আবীর হোসেন, মুকুলসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

 

আকবর বাহিনী: শ্রীপুর উপজেলার টুপি পাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন মিয়া গড়ে তোলেন লড়াকু মুক্তিযোদ্ধাদের দল ‘আকবর বাহিনী’। আকবর হোসেন ছিলেন এ দলের কমান্ডার আর বর্তমান জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোল্যা নবুওয়াত আলী তার ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন। এই বাহিনী বিভিন্ন যুদ্ধে পাক বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে।

 

শত্রুমুক্ত হলো মাগুরা: ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হওয়ার পর পাক বাহিনী মাগুরায় এসে আশ্রয় নেয়। কিন্তু মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর যৌথ আক্রমণে টিকতে না পেরে পাক সেনারা সেদিন বিকাল থেকেই মাগুরা ছেড়ে পালাতে শুরু করে। রাতে তারা গড়াই নদী পার হয়ে ফরিদপুরে কামারখালীর দিকে পালিয়ে যায়। ৭ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা মাগুরার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। মাগুরায় ওড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। সর্বত্র জয় বাংলা ধ্বনীতে মুখরিত হয়ে উঠে। মিত্র বাহিনীর জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা হেলিকপ্টারযোগে মাগুরার নোমানী ময়দানে এসে সকলের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

 

রণাঙ্গনের মুখপত্র: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাজধানী মুজিবনগর থেকে “বাংলার ডাক” নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন মাগুরার সাংবাদিক দীপক রায় চৌধুরী । পত্রিকাটি ভারতের রানাঘাট মহকুমার একটি প্রেস থেকে ছাপা হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে যেত। পত্রিকাটিতে রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাফল্যের কাহিনী প্রকাশিত হতো।

 

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক: মাগুরা মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সৈয়দ আতর আলী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতে মারা যান। তাকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এনে দাফন করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মন্ত্রী মরহুম সোহরাব হোসেন, সাবেক এমপি মরহুম এডভোকেট আছাদুজ্জামান, সাবেক মহকুমা প্রশাসক ওলিউল ইসলাম প্রমুখ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন।

1
2
3
2.

BD Travel Info Channel

BDCNEWS Channel

Raindrop Tours Channel

Raindrop Tours Channel

Raindrop eShop Channel

Soumya Bhowmik Channel

hm-expo
Leave a Comment:
উপরে দেখুন